You are here
Home > জাতীয় > আনভীরসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ‘ধর্ষণ ও হত্যার’ মামলা মুনিয়ার বোনের

আনভীরসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ‘ধর্ষণ ও হত্যার’ মামলা মুনিয়ার বোনের

কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনার’ মামলায় পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এবার ‘হত্যা ও ধর্ষণের’ মামলা করেছেন মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া।

সোমবার ঢাকার ৮ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম মাফরুজা পারভীনের আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়।

বিচারক বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন বলে পাবলিক প্রসিকিউটর মো. রেজাউল করিম জানান। 

বসুন্ধরার এমডি আনভীরের পাশাপাশি তার বাবা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, মা আফরোজা সোবহান, আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা এবং শারমিন, সাইফা রহমান মিম, মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা এবং ইব্রাহিম আহমেদ রিপনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।

মামলায় কী অভিযোগ করা হয়েছে জানতে চাইলে বাদীর আইনজীবী মাসুদ সালাউদ্দিন বলেন, “সায়েম সোবহান আনভীর ফুসলিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মুনিয়ার সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে তাকে বিয়ে না করে নৃশংসভাবে হত্যা করে। আর এতে তার পরিবারের সদস্যসহ অন্য আসামিরা সাহায্য করে। আমরা আটজনকে আসামি করেছি “

আদালত মামলাটি তদন্ত করে আগামী ৬ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে বাদীর অপর আইনজীবী শাহ মো. আব্দুল কাইয়ূম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে মোট ৬ জনকে। আরজিতে আইনজীবী হিসাবে স্বাক্ষর করেছেন মো. আবুল গোফরান দুলাল।

গত ২৬ এপ্রিল রাতে ঢাকার গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় ২১ বছর বয়সী মোশারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

সেই রাতেই আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে আনভীরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন ওই তরুণীর বোন নুসরাত জাহান তানিয়া।

সেখানে বলা হয়, ‘বিয়ের প্রলোভন’ দেখিয়ে সায়েম সোবহান আনভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন মুনিয়ার সঙ্গে। ওই বাসায় তার যাতায়াত ছিল। কিন্তু বিয়ে না করে তিনি উল্টো ‘হুমকি’ দিয়েছিলেন মুনিয়াকে।

সেই অভিযোগের বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কখনো কথা বলেননি বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি। মুনিয়ার মৃত্যুর সঙ্গে তার কোনো ‘সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি’ জানিয়ে গত ১৯ জুলাই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ।

পুলিশের ওই প্রতিবেদনে অনাস্থা (নারাজি) জানিয়ে মুনিয়ার বোন, মামলার বাদী নুসরাত জাহান তানিয়া অন্য কেনো সংস্থার মাধ্যমে মামলাটি তদন্তের আবেদন করেছিলেন। তা খারিজ করে ঢাকার মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী গত ১৮ অগাস্ট চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে সায়েম সোবহান আনভীরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।

বাদীর অন্যতম আইনজীবী ব্যরিস্টার এম সরোয়ার হোসেন সেদিন বলেছিলেন, “আমরা উচ্চ আদালতে রিভিশন চাইব। এ রকম আদেশ আমরা আগেই জানতাম।”

মুনিয়া ঢাকার মিরপুর ক্যান্টনম্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি কুমিল্লার মনোহরপুরে; পরিবার সেখানেই থাকেন। মৃত্যুর মাস দুয়েক আগে এক লাখ টাকায় ভাড়া নেওয়া ওই ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন তিনি।

মুনিয়ার মৃতদেহ উদ্ধারের পর সেখান থেকে তার মোবাইলসহ বিভিন্ন ধরনের আলামত উদ্ধার করে পুলিশ, যার মধ্যে ছয়টি ডায়েরি ছিল। সিসিটিভির ভিডিও পরীক্ষা করে মুনিয়ার ফ্ল্যাটে আনভীরের যাতায়াতের ‘প্রমাণ পাওয়ার’ কথাও সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল।

তবে তদন্ত শেষে প্রতিবেদনে মুনিয়ার ‘আত্মহত্যায়’ আনভীরের ‘সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ার’ কথা বলা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।

এবারের মামলার আর্জিতে বলা হয়েছে, আসামি আনভীর ২০১৯ সালের জুন মাসে বনানীতে ‘৬৫ হাজার টাকায়’ একটি বাসা ভাড়া নেন এবং ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে’ মুনিয়াকে নিয়ে সেখানে ওঠেন।

“আনভীর ৭/৮ ধরে তাকে ধর্ষণ করে। বিষয়টি জানাজানি হলে তানভীরের মা,বাবা ও মডেল পিয়াসা  তাদের বাসায় মুনিয়াকে ডেকে নিয়ে ঢাকা থেকে চলে যেতে বলে এবং তা না করলে হত্যার হুমকি দেয়।”

এরপর মুনিয়া কুমিল্লায় বাবার বাড়িতে চলে যান। কিন্তু পরে চলতি বছরের মার্চে মুনিয়াকে ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে’ আবারও ঢাকায় নিয়ে আসেন আসামি এবং গুলশানের ওই বাসায় তাকে রাখেন।

“মুনিয়া ২/৩ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যায়। বিষয়টি তানভীরকে জানিয়ে সে বিয়ে করার জন্য চাপ দেয়। বিষয়টি এ মামলার অপর আসামিদের মধ্যে জানাজানি হলে তারা পারিবারিক সুনাম, সুখ্যাতি রক্ষায় মুনিয়াকে হত্যার হুমকি দেয় ।”

আরজিতে বলা হয়, “২০২১  সালের ২৬ এপ্রিল সকাল ৯টায় মুনিয়া তার বোনকে (মামলার বাদী) ফোনে বলে, ‘আপু আমার বিপদ, আনভীর আমাকে ধোঁকা দিয়েছে।  সে আমাকে বিয়ে করবে না, ভোগ করেছে মাত্র।  তুমি তাড়াতাড়ি এসো, আমার বড় দুর্ঘটনা হয়ে যেতে পার ‘।”

এরপর তানিয়া কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসে ওই ভবনের ম্যনেজারের সাহায্যে তালা ভেঙে বাসায় ঢুকে মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ পান বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

Similar Articles

Leave a Reply

Top