সাবেক অধিনায়ক ও পেসার জেসন হোল্ডারের ডাবল হ্যাট্টিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতলো স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
গতরাতে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৭ রানে হারায় ইংলিশদের। টানা চার বলে চার উইকেট নিয়ে ডাবল হ্যাট্টিক করেন হোল্ডার। ইনিংসে ২৭ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন হোল্ডার। পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ৩-২ ব্যবধানে জিতলো সাবেক বিশ^ চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
প্রথম চার ম্যাচ শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ড সিরিজে ২-২ সমতা ছিলো। তাই পঞ্চম ও শেষ ম্যাচটি ‘অঘোষিত ফাইনালে’ রুপ নিয়েছিলো।
বার্বাডোজে ‘অঘোষিত ফাইনালে’ টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই ওপেনার ব্রান্ডন কিং ও কাইল মায়ার্স দলকে দারুন সূচনা এনে দেন। পাওয়ার প্লেতে ৫৮ রান তোলেন তারা। তবে সপ্তম ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন ইংল্যান্ডের স্পিনার আদিল রশিদ। ১৯ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩১ রান করে প্রথম ব্যাটার হিসেবে থামেন মায়ার্স।
তিন নম্বরে নামা রোমারিও শেফহার্ডকে ৬ রানে ও কিংকে ৩৪ রানে শিকার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চাপে ফেলে দেন ডান-হাতি অফ-লেগ স্পিনার লিয়াম লিভিংস্টোন। ৩১ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান কিং।
চার নম্বরে নেমে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি নিকোলাস পুরান। তাকে ব্যক্তিগত ২১ রানে বোল্ড করেন রশিদ। ১৫ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ১০৫ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এরপর শেষ দিকে ব্যাট হাতে ঝড় তুলেন অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড ও তৃতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরিয়ান রোভম্যান পাওয়েল। ৩৩ বলে অবিচ্ছিন্ন ৭৪ রানের জুটি গড়েন তারা। শেষ চার ওভারে পোলার্ড-পাওয়েল যথাক্রমে ১৮, ১৫, ১৪, ১৯ রান তুলেন। এতে ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৭৯ রানের সংগ্রহ পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
২৫ বলে অপরাজিত ৪১ রান করেন পোলার্ড। ১টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন তিনি। ১৭ বলে ১টি চার ও ৪টি ছক্কায় অপরাজিত ৩৫ রান করেন পাওয়েল। ইংল্যান্ডের রশিদ-লিভিংস্টোন ২টি করে উইকেট নেন।
১৮০ রানের টার্গেটে শুরুটা ভালো হয়নি ইংল্যান্ডের। প্রথম ওভারেই ওপেনার জেসন রয়কে ফেরান ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনার আকিল হোসেন। আরেক ওপেনার ১৬ রান করা টম ব্যান্টনকে শিকার করেন ওডিন স্মিথ।
৪০ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন জেমস ভিন্স ও আগের ম্যাচের নায়ক দলনেতা মঈন আলি। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দ্রুত রান তুলতে পারেননি তারা। ৩৯ বলে ৪৬ রান যোগ করেন দু’জনে। মঈনকে ১৪ রানে থামিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন হোল্ডার।
এরপর ইংল্যান্ডের মিডল-অর্ডারে ধস নামান হোসেন। লিভিংস্টোনকে ৬, উইকেটে সেট থাকা ভিন্সকে ৫৫ ও ফিল সল্টকে ৩ রানে আউট করেন হোসেন। ১১৯ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতনে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে ইংল্যান্ড।
তবে লোয়ার-অর্ডারে হাল ছাড়েননি স্যাম বিলিংস। ক্রিস জর্ডানকে নিয়ে লড়াই করেন তিনি। ১৮তম ওভারে ২০ রান তুলেন বিলিংস ও জর্ডান। ১৯তম ওভারে ৮ রান নিতে পারেন তারা। এতে ম্যাচ জিততে শেষ ওভারে ২০ রান দরকার পড়ে ইংল্যান্ডের।
শেষ ওভারে বল হাতে নিয়ে প্রথম বলে নো-বলসহ ২ রান দেন হোল্ডার। তবে এরপর ইংল্যান্ডকে ছাড়খাড় করে দেন হোল্ডার। দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম বল পর্যন্ত টানা ৪ উইকেট নিয়ে ডাবল হ্যাট্টিক পূর্ণ করেন হোল্ডার। এতে ১৬২ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। হোল্ডারের শিকার হন জর্ডান-বিলিংস-রশিদ ও সাকিব মাহমুদ। রশিদকে শিকার করে হ্যাট্টিক ও সাকিবকে আউট করে ডাবল হ্যাট্টিক করেন হোল্ডার। বিলিংস ২৮ বলে ৪১ রান করেন।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২৭তম ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে প্রথম হ্যাট্টিক করলেন হোল্ডার। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে প্রথম এবং বিশ্বের চতুর্থ বোলার হিসেবে ডাবল হ্যাট্রিক করেন হোল্ডার। এর আগে ডাবল হ্যাট্রিক করেছেন আফগানিস্তানের রশিদ খান, শ্রীলংকার লাসিথ মালিঙ্গা এবং আয়ারল্যান্ডের কার্টিস ক্যাম্ফার। ক্রিকেটে টানা চার বলে ৪ উইকেট নেওয়ার বিষয়টিকে ‘ডাবল হ্যাট্টিক’ বলা হয়।
ডাবল হ্যাট্টিক করা ইনিংসে ২ দশমিক ৫ ডেলিভারিতে ২৭ রানে ৫ উইকেট নেন হোল্ডার। এই ফরম্যাটে এটিই তার সেরা বোলিং। টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথমবার এক ম্যাচে ৫ উইকেট নিলেন হোল্ডার। ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন হোসেন। ম্যাচের মত সিরিজ সেরাও হন হোল্ডার।