দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও ম্যানচেস্টার সিটিকে দ্বিতীয় লেগে ৩-১ গোলে পরাজিত করে দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৫ ব্যবধানে জয়ী হয়ে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। আগামী ২৮ মে প্যারিসের স্তাদে দি ফ্রান্সের ফাইনালে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নদের প্রতিপক্ষ ইংলিশ জায়ান্ট লিভারপুল।
কাল সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে সেমিফাইনালে দ্বিতীয় লেগে রিয়াদ মাহরেজের ৭৩ মিনিটের গোলে সিটি দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৩ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। ম্যাচটি যখন স্বাগতিকদের কাছে নিশ্চিত পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল ঠিক তখনই বদলী খেলোয়াড় রডরিগোর ৯০ ও ৯১ মিনিটের দুই গোলে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারনে অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হয়। উজ্জীবিত রিয়ালকে এরপর আর আটকানো যায়নি। ৯৫ মিনিটে ইন-ফর্ম স্ট্রাইকার করিম বেনজেমা স্পট কিক থেকে গোল করে পুরো স্টেডিয়ামকে উল্লাসে মাতিয়ে তুলেন। এর মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে আরো একটি রোমাঞ্চকর ম্যাচের অবসান হয়।
ম্যাচ শেষে রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি বলেছেন, ‘এটাই এই ক্লাবের মাহাত্ম্য। রিয়াল এমন একটি ক্লাব যেখানে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ ধরে রাখার শিক্ষা দেয়া হয়। সকলের কাছে যখন মনে হয় সবকিছু শেষ হয়ে গেছে ঠিক তখনই এই ক্লাবটি ঘুড়ে দাঁড়ায়। এর মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাবার শক্তি পাওয়া যায়। লড়াই করার বিশ্বাস ফিরে আসে।’
আনচেলত্তি আরো বলেছেন এই ম্যাচের আগে রিয়ালের বিভিন্ন ম্যাচে ফিরে আসার ভিডিও খেলোয়াড়দের দেখানো হয়েছে। এবারের মৌসুমে আটটি এমন ম্যাচ তাদের দেখানো যেখান থেকে তারা অনুপ্রেরণা পেয়েছে।
এনিয়ে প্রথম কোচ হিসেবে পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জণ করলেন আনচেলত্তি। কোয়ার্টার ফাইনালে চেলসি ও শেষ ১৬’তে পিএসজিকে হারিয়ে ইতোমধ্যেই এবারের আসরে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের জানান দিয়েছিল মাদ্রিদ। এখন শুধু অপেক্ষা ফাইনালে লিভারপুল বধের।
পিএসজি ও চেলসির মত সিটি প্রায় পুরো ম্যাচে আধিপত্য দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করতে বাধ্য হলো, রিয়াল দলটি মনে হয় এমনই। পেপ গার্দিওলার অধীনে আরো এক বছর সিটিকে ইউরোপীয়ান আসরের শিরোপার খুব কাছে এসেও হতাশ হতে হলো। গার্দিওলা বলেছেন, ‘এটা আমাদের জন্য কঠিন একটি ম্যাচ ছিল, এটা স্বীকার করতেই হবে। আমরা খুব কাছে গিয়ে শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারিনি।’
এবারের ফাইনাল নিয়ে ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ১৭তম ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো রিয়াল। অথচ কালকের ম্যাচের ৯০ মিনিট পর্যন্ত এই স্বপ্ন একেবারেই ফিকে হয়ে গিয়েছিল।
ম্যাচের শুরুতে সান্তিয়াগোর একপ্রান্তের স্ট্যান্ডে টানানো বড় একটি ব্যানারে লেখা ছিল, ‘ইউরোপের রাজাদের কাছ থেকে আরো একটি যাদুকরী রাত আসছে।’ যদিও নিয়মিত সময়ের প্রায় পুরোটা সময়ই মনে হয়েছে রিয়ালের ভাগ্য যেন কোনভাবেই সহায় হচ্ছে না। গত সপ্তাহে ইতিহাদ স্টেডিয়ামে সাত গোলের নাটকীয় ম্যাচের পর কাল আরো একটি রোমাঞ্চকর ম্যাচ উপহার পেল পুরো ফুটবল বিশ্ব।
ম্যাচের শুরু থেকেই রিয়াল বেশ আগ্রাসী ছিল। বেনজেমা দুটি কঠিন সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। কিন্তু সিটিও ছেড়ে কথা বলেনি। মধ্যমাঠে মাদ্রিদের ভুলের সুবাদে কেভিন ডি ব্রুইনা রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়াকে প্রায় পরাস্ত করেই ফেলেছিলেন। বার্নান্ডো সিলভার একটি শট দারুনভাবে রুখে দেন কোর্তোয়া। বিরতির আগে আবারো নিজেদের গুছিয়ে নেয় রিয়াল। কাউন্টার এ্যাটাক থেকে লুকা মড্রিচ একটি সুযোগ তৈরী করে দিলেও তা কাজে লাগাতে পারেননি ভিনিসিয়াস জুনিয়র।
বিরতির পর সম্ভবত ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগ নষ্ট করে রিয়াল। ডানদিক থেকে দানি কারভাহালের আক্রমন থেকে ভিনির কোনাকুনি শটটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। সিটির রাইট-ব্যাক কাইল ওয়াকারের ইনজুরি মাদ্রিদের জন্য কিছুটা সুবিধা নিয়ে আসে। ম্যাচটি যখন ছন্দে ফিরছিল ঠিক তখনই বদলী খেলোয়াড় ইকে গুনডোগানের পাস থেকে সিলভা বল পেয়ে ডানদিকে রিয়ার মাহরেজের দিকে বাড়িয়ে দেন। কোর্তোয়াকে পরাস্ত করতে এবার আর ভুল করেননি মাহারেজ। বদলী হিসেবে মাঠে নামা জ্যাক গ্রীলিশ ব্যবধান প্রায় দ্বিগুন করেই ফেলেছিলেন। কিন্তু লাইনের উপর থেকে কোনমতে তা ক্লিয়ার করেন ফারলান্ড মেন্ডি।
৯০ মিনিটে বেনজেমার দুর্দান্ত ক্রস থেকে রডরিগোর শট জালে প্রবেশ করলে স্বস্তি ফিরে আসে রিয়াল শিবিরে। ম্যাচের নাটকীয়তা তকনো বাকি। ঐ সময়ই ইনজুরি টাইম হিসেবে ছয় মিনিট দেখানো হলে সান্তিয়াগোর দর্শকরা নড়েচড়ে বসে। কারভাহালের ক্রস থেকে রডরিগোর হেডে এক মিনিট পর রিয়াল যখন সমতা ফেরায় তখন অন্যরকম এক আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে পুরো স্টেডিয়াম। অতিরিক্ত সময়ে চার মিনিটের মধ্যে রুবেন ডিয়াসের ফাউল থেকে প্রাপ্ত পেনাল্টিতে বেনজেমা এডারসনকে উল্টো দিকে পাঠিয়ে রিয়ালকে স্মরণীয় এক জয় উপহার দেন।