ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি সত্বেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করে ৪৭ দশমিক ২ ওভারে ২০৯ রানে অলআউট হয়ে গেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। তিন নম্বরে নেমে সর্বোচ্চ ৫৮ রান করেন শান্ত। দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন মাহমুদুল্লাহ।
আজ মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
লিটন দাসকে নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করেন তামিম। প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে ক্যাচ দিয়ে অল্পের জন্য রক্ষা পান তামিম। ইংল্যান্ড পেসার ক্রিস ওকসের বলে ঠিকঠাক খেলতে না পারায় নিচু ক্যাচ দেন তামিম। তবে নিচু হওয়া বলটি হাতে নিতে পারেননি বোলার ওকস।
ইংল্যান্ডের আরেক পেসার জোফরা আর্চারের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে দু’টি ও চতুর্থ ওভারে ফ্রি-হিটে ১টি বাউন্ডারি মারেন তামিম। ৪ ওভারের মধ্যে তামিমের ব্যাট থেকে ৩টি চার এলেও অন্যপ্রান্তে সাবধানী ছিলেন লিটন। ১০ম বলে এসে রানের খাতা খুলেন লিটন।
পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে পুল করে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মারেন লিটন। ওকসের করা পরের ডেলিভারিতেই লেগ বিফোর আউট হন লিটন। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ১৫ বলে ৭ রান করেন লিটন। দলীয় ৩৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
লিটনের বিদায়ে উইকেটে আসেন সর্বশেষ বিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম ১২ বলের মধ্যে ৩টি চার মারেন শান্ত।
১০ম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসেই তামিমকে বিদায় দেন ইংল্যান্ডের পেসার মার্ক উড। উডের ১৪৯ কিলোমিটার গতির বল তামিমের কনুইয়ে লেগে স্টাম্পে আঘাত হানে। ৪টি চারে ৩২ বলে ২৩ রান করে বিদায় নেন তামিম।
৫১ রানে তামিমকে হারানোর পর জুটি বাঁধেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। সাবধানে এগোতে থাকেন তারা। ১৭তম ওভারে ফিল সল্টের ভুলে জীবন পান মুশি। স্পিনার মঈন আলির বলে মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারেন মুশফিক। সেখানে বল হাতে নিলেও বাউন্ডারির লাইনে পা লেগে যায় সল্টের। ছক্কা পান মুশফিক। ৮ রানে জীবন পান তিনি।
জীবন পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি মুশফিক। ২০তম ওভারে আরেক স্পিনার আদিল রশিদের চতুর্থ বলে স্লগে ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে উডকে ক্যাচ দেন ৩৪ বলে ১৬ রান করা মুশি। শান্তর সাথে ৬২ বলে ৪৪ রানের জুটি গড়তে পারেন মুশফিক।
মুশফিকের বিদায়ে পাঁচ নম্বরে নামা সাকিব আল হাসান সুবিধা করতে পারেননি। মঈনের বলে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাট-বলে স্পর্শ করাতে না পারায় সরাসরি বোল্ড হন ১২ বলে ১টি চারে ৮ রান করা সাকিব।
১০৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। দলকে চাপমুক্ত করতে বড় জুটির চেষ্টা করেন শান্ত ও ছয় নম্বরে নামা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৩১তম ওভারের পঞ্চম বলে ১৬ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান শান্ত। এজন্য ৬৭ বল খেলেন তিনি।
৩৫তম ওভারে বাংলাদেশের রান দেড়শ পার করে দলকে খেলায় ফেরান শান্ত ও মাহমুদুল্লাহ। পরের ওভারে রশিদের বলে লেগ সাইড দিয়ে মারতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে জেসন রয়ের দারুন ক্যাচে বিদায় নেয়ার আগে ৬টি চারে ৮২ বল খেলে ৫৮ রান করেন শান্ত। মাহমুদুল্লাহর সাথে জুটিতে ৫৩ রান যোগ করেন শান্ত।
শান্তকে অনুসরণ করে পরের ওভারেই বিদায় নেন মাহমুদুল্লাহ। উডের লেগ স্টাম্পের বলে ব্যাট চালান মাহমুদুল্লাহ। বল গিয়ে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক জশ বাটলারের হাতে। আউটের আবেদন করে ইংল্যান্ড। সফট সিগন্যালে নট আউট দিয়ে থার্ড আম্পায়ারের সিদ্বান্তের উপর ছেড়ে দেন অন-ফিল্ড আম্পায়ার। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল মাহমুদুল্লাহর ব্যাট স্পর্শ করে। বিদায় ঘটে ৩টি চারে ৪৮ বলে ৩১ রান করা মাহমুদুল্লাহর।
পরপর দুই ওভারে দুই সেট ব্যাটার শান্ত ও মাহমুদুল্লাহকে হারিয়ে আবারও চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ১৬২ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় টাইগাররা।
টেল-এন্ডারে বাংলাদেশের দুই ভরসা আফিফ হোসেন ও মেহেদি হাসান মিরাজও দ্রুত প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। আফিফকে ৯ রানে বিদায় দেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা অকেশনাল স্পিনার উইল জ্যাকস। মিরাজকে ৭ রানে থামান আর্চার। ১৮২ রানে অষ্টম উইকেটের পতন ঘটে বাংলাদেশের। এতে ২শর নীচে গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়ে টাইগাররা। কিন্তু সেটি হতে দেননি তাসকিন আহমেদ ও তাইজুল ইসলাম। নবম উইকেটে ২৫ বলে ২৬ রানের জুটি গড়েন তারা। ২শ রান স্পর্শ করে বাংলাদেশ।
৪৭তম ওভারে তাসকিনকে ১৪ রানে থামিয়ে জুটি ভাঙ্গেন আর্চার। ১৮ বল খেলে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন তাসকিন। পরের ওভারে মঈনের বলে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন ১৩ বলে ১০ রান করেন তাইজুল। ৪৭ দশমিক ২ ওভারে ২০৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের আর্চার-উড-মঈন ও রশিদ ২টি করে উইকেট নেন। ১টি করে শিকার করেন ওকস ও জ্যাকস।