ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মেহেদি হাসান মিরাজের প্রথম সেঞ্চুরিতে বড় সমংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ দল। তার অপরাজিত সেঞ্চুরি ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাফ-সেঞ্চুরিতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৭১ রানের বড় সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ। মিরাজ ৮৩ বলে অপরাজিত ১০০ রানে অপরাজিত থাকেন । ৯৬ বলে ৭৭ রান করেন মাহমুদুল্লাহ।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে টপ-অর্ডারদের ব্যর্থতায় ৬৯ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় চলে যায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে সপ্তম উইকেটে ১৬৫ বলে ১৪৮ রানের দায়িত্বশীল জুটি গড়ে দলকে দারুনভাবে খেলায় ফেরান রিয়াদ ও মিরাজ। শেষদিকে অষ্টম উইকেটে মিরাজ ও নাসুম আহমেদের ২৩ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫৪ রানে বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচের মত এবারও টস জিতেন বাংলাদেশের অধিনায়ক লিটন দাস। এবার প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেন লিটন। আগের ম্যাচ থেকে একটি পরিবর্তন- পেসার হাসান মাহমুদের জায়গায় স্পিনার নাসুম আহমেদকে অন্তর্ভুক্ত করে একাদষ সাজায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ওভারের প্রথম দুই বলে দু’টি চার মারেন ওপেনার হিসেবে খেলতে নামা এনামুল হক বিজয়। ওভারের চতুর্থ বলে স্লিপে রোহিত শর্মাকে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান তিনি। বিজয়ের ক্যাচ মিস করার পাশাপাশি আঙুলে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন রোাহিত। পেসার মোহাম্মদ সিরাজের পরের বলেই লেগ বিফোর আউট হন বিজয়। রিভিউ নিয়েও টিকতে না পারলে ৯ বলে ১১ রান ইতি ঘটে বিজয়ের ইনিংসের।
বিজয়কে হারানোর পর তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন লিটন। দেখেশুনে খেলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। দশম ওভারে লিটন-শান্তর জুটি ভাঙ্গেন সিরাজ। টেস্ট মেজাজে খেলা লিটন সিরাজের বলে বোল্ড আউট হওয়ার আগে ১টি চারে ২৩ বল খেলে ৭ রান করেন ।
অধিনায়ক ফেরার কিছুক্ষণ পর প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন শান্তও। ভারতের পেসার উমরান মালিকের অফ-স্ট্যাম্পের ডেলিভারিতে বলের লাইনে পা না নিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন শান্ত। ৩টি চারে ৩৫ বল খেলে ২১ রান করেন তিনি।
৫২ রানে ৩ উইকেট পতনের পর ক্রিজে জুটি বাঁধেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। উইকেট সেট হতে সময় নিচ্ছিলেন তারা। ভারতের দুই পেসার সিরাজ ও মালিকের বল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন সাকিব।
আত্মবিশ^াস ফিরে পেতে ১৭তম ওভারে ভারতের স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দরের উপর চড়াও হতে বিদায় নেন সাকিব। তবে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিস টাইমিংয়ে শর্ট ফাইন লেগে শিখর ধাওয়ানকে ক্যাচ দেন ২০ বলে ১টি চারে ৮ রান করা সাকিব।
নিজের দ্বিতীয় ওভারে সাকিবকে ফেরানোর পর তৃতীয় ওভারে মুশফিক ও আফিফ হোসেনকে থামান সুন্দর।
সুন্দরের ডেলিভারি ডিফেন্স করতে গিয়ে লেগ স্লিপে ধাওয়ানকে ক্যাচ দেন মুশফিক। রিভিউতে বিদায় হয় ২টি চারে ২৪ বলে ১২ রান করা মুশফিকের। অফ-স্ট্যাম্পে করা পরের ডেলিভারিতে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হন আফিফ। ১ বল খেলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মত খালি হাতে ফিরেন তিনি।
১৯তম ওভারে ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে মহাচাপে পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় পরিস্থিতির সাথে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে বাংলাদেশের রানের চাকা সচল করেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও আগের ম্যাচের হিরো মেহেদি হাসান মিরাজ। ২৪তম ওভারে ১শ ও ৩৬তম ওভারে দলের রান দেড়শ পূর্ণ করেন তারা। স্বাচ্ছন্দ্যে উইকেটের চারপাশ থেকে রান তুলেছেন মাহমুদুল্লাহ-মিরাজ জুটি। বাহারি সব শটে বলকে সীমানা ছাড়াও করেছেন তারা।
৩৮তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তৃতীয় ও ভারতের বিপক্ষে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান মিরাজ। ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি পুর্ন করেন তিনি। ৪০তম ওভারে জুটিতে ১শ পূর্ণ হয় মিরাজ ও মাহমুদুল্লাহর।
পরের ওভারে ৭৪তম বলে ২১৪ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৭তম ও ভারতের বিপক্ষে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মাহমুদুল্লাহ। ৪৫তম ওভারে বাংলাদেশের রান ২শ স্পর্শ করে।
অবশেষে ৪৭তম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ২১৭ রানে মাহমুদুল্লাহ-মিরাজ জুটি ভাঙ্গতে পারে ভারত। মালিকের বলে আপার কাট শট মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মাহমুদুল্লাহ।
খাদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তুলে সপ্তম উইকেটে মিরাজের সাথে ১৬৫ বলে ১৪৮ রান যোগ করেন মাহমুদুল্লাহ। ভারতের বিপক্ষে যেকোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি। ৭টি চারে ৯৬ বলে ৭৭ রান করেন মাহমুদুল্লাহ।
মাহমুদুল্লাহ’র আউটের পর অষ্টম উইকেটে ২৩ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫৪ রান তুলে দলকে শক্তপোক্ত সংগ্রহ এনে দেন মিরাজ ও নাসুম আহমেদ। ৭ উইকেটে ২৭১ রান করে টাইগাররা।
ইনিংসের শেষ ওভারে ২টি ছক্কায় সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগান মিরাজ। শেষ বলে ১ রান নিয়ে ৬৬ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি করেন মিরাজ। টেস্টেও ১টি সেঞ্চুরি রয়েছে মিরাজের। ৮৩ বল খেলে ৮টি চার ও ৪টি ছক্কায় অপরাজিত ১০০ রান করেন মিরাজ। ২টি চার ও ১টি ছয়ে ১১ বলে অপরাজিত ১৮ রান করেন নাসুম। ভারতের সুন্দর ৩টি, সিরাজ ও মালিক ২টি করে উইকেট নেন।