মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে রোববার দারুন এক দিন কাটলো বাংলাদেশের। দ্বিতীয় দিনটি নিজেদের করে রাখলো বাংলাদেশের বোলার-ব্যাটাররা। নিউজিল্যান্ডকে ৩২৮ রানে অলআউট করে দিয়ে, নিজেদের ইনিংসে ২ উইকেটে ১৭৫ রান করেছে বাংলাদেশ। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে ১৫৩ রানে পিছিয়ে টাইগাররা।
সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন শেষে ৫ উইকেটে ২৫৮ রান করেছিলো নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশ বোলারদের তোপে সুবিধা করতে পারেনি কিউইরা।
রোববার বাকী ৫ উইকেটে মাত্র ৭০ রান যোগ করতে পারে নিউজিল্যান্ড। পেসার শরিফুল ইসলাম-স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ ও মোমিনুল হকের তোপে ৩২৮ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড। আজ ৩ উইকেট নেন মিরাজ।
৩২ রান নিয়ে দিন শুরু করা হেনরি নিকোলস লোয়ার-অর্ডারকে নিয়ে লড়াই করার চেস্টা করেছেন। কিন্তু তিনি যথার্থ সঙ্গ পাননি। তিন উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের লোয়ার-অর্ডারে ধস নামান স্পিনার মিরাজ। কাইল জেমিসন-টিম সাউদি ৬ ও নিল ওয়াগনারকে খালি হাতে বিদায় দেন মিরাজ। ৪ রান করা রাচিন রবীন্দ্রকে শিকার করেন শরিফুল।
এক প্রান্ত আগলে দলের রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন নিকোলস। টেস্ট ক্যারিয়ারের ১২তম হাফ-সেঞ্চুরিও করেছেন তিনি। শেষ ব্যাটার হিসেবে নিকোলসকে তুলে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের সমাপ্তি টানেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মোমিনুল হক। প্রথম দিন নিউজিল্যান্ডের হয়ে সেঞ্চুরি করা ডেভন কনওয়ের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটিও শিকার করেছিলেন মোমিনুল।
রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে সাদমানকে ক্যাচ দেন ১২৭ বলে ১২টি চারে ৭৫ রান করা নিকোলস। ৯ রানে অপরাজিত থাকেন ট্রেন্ট বোল্ট।
বাংলাদেশের শরিফুল-মিরাজ ৩টি করে, মোমিনুল ২টি ও এবাদত ১টি উইকেট নেন। ২৫টি ডেলিভারিতে ৬ রানে ২ উইকেট নেন টাইগার দলপতি।
দ্বিতীয় সেশনে নিউজিল্যান্ড ইনিংসে শেষ হওয়ার পর ব্যাট হাতে দলকে দারুন সূচনার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান জয়। দেখেশুনে খেলে ১৮ ওভার পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন থাকেন তারা। তবে ১৯তম ওভারে ওয়াগনারের বলে তাকেই ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ২২ রান করা সাদমান। এতে ৪৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে বড় জুটি গড়েন মাহমুদুল ইসলাম জয়। ১ উইকেটে ৭০ রান নিয়ে চা-বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। দিনের শেষ সেশনে স্বাচ্ছেন্দ্যে ব্যাট করেছেন মাহমুদুল ও শান্ত। স্পিনার রবীন্দ্রর বলে ছক্কা মেরে হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ পান শান্ত। টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলতে শান্ত খেলেছেন ৯০ বল।
তখন অন্যপ্রান্তে হাফ-সেঞ্চুরির অপেক্ষায় ছিলেন জয়। কিছুক্ষণ বাদেই টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি পুরন করেন তিনি। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই হাফ-সেঞ্চুরি পেতে জয় খেলেছেন ১৬৫ বল।
হাফ-সেঞ্চুরির পরও নিজের ইনিংস বড় করছিলেন শান্ত। কিন্তু ওয়াগনারের আউটসুইং সামলাতে না পেরে গালিতে ইয়ংকে ক্যাচ দেন শান্ত। ১০৯ বল খেলে ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ৬৪ রান করেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে ১০৪ রান যোগ করেন শান্ত-শান্ত।
৫৮তম ওভারে দলীয় ১৪৭ রানে শান্তর আউট হওয়ার পর দিনের খেলার ৯ ওভার বাকী ছিলো। এই সময়টায় আর কোন বিপদ হতে দেননি জয় ও মোমিনুল। দিন শেষে ২১১ বল খেলে ৭টি চারে ৭০ রানে জয় এবং ২৭ বল খেলে ৮ রানে অপরাজিত আছেন। নিউজিল্যান্ডের ওয়াগনার ২৭ রানে ২ উইকেট নেন।
স্কোর কার্ড : (টস-বাংলাদেশ)
নিউজিল্যান্ড ইনিংস :
টম লাথাম ক লিটন ব শরিফুল ১
উইল ইয়ং রান আউট (শান্ত/লিটন) ৫২
ডেভন কনওয়ে ক লিটন ব মোমিনুল ১২২
রস টেইলর ক সাদমান ব শরিফুল ৩১
হেনরি নিকোলস ক সাদমান ব মোমিনুল ৭৫
টম ব্লানডেল বোল্ড ব এবাদত ১১
রাচিন রবীন্দ্র ক সাদমান ব শরিফুল ৪
কাইল জেমিসন ক সাদমান ব মিরাজ ৬
টিম সাউদি ক মোমিনুল ব মিরাজ ৬
নিল ওয়াগনার ক লিটন ব মিরাজ ০
ট্রেন্ট বোল্ট অপরাজিত ৯
অতিরিক্ত (বা-১, লে বা-৪, নো-৩, ও-৩) ১১
মোট (অলআউট উইকেট, ১০৮.১ ওভার) ৩২৮
উইকেট পতন : ১/১ (লাথাম), ২/১৩৯ (ইয়ং), ৩/১৮৯ (টেইলর), ৪/২২৭ (কনওয়ে), ৫/২৫৮ (ব্লানডেল), ৬/২৬৫ (রবীন্দ্র), ৭/২৯৭ (জেমিসন), ৮/৩১৬ (সাউদি), ৯/৩১৬ (ওয়াগনার), ১০/৩২৮ (নিকোলস)।
বাংলাদেশ বোলিং :
তাসকিন : ২৬-৭-৭৭-০ (ও-১) (নো-২),
শরিফুল : ২৬-৭-৬৯-৩,
এবাদত : ১৮-৩-৭৫-১ (ও-২),
মিরাজ : ৩২-৯-৮৬-৩ (নো-১),
শান্ত : ২-০-১০-০,
মোমিনুল : ৪.১-০-৬-২।
বাংলাদেশ ইনিংস :
সাদমান ইসলাম ক এন্ড ব ওয়াগনার ২২
মাহমুদুল হাসান জয় অপরাজিত ৭০
নাজমুল হোসেন শান্ত ক ইয়ং ব ওয়াগনার ৬৪
মোমিনুল অপরাজিত ৮
অতিরিক্ত (লে বা-৪, ও-২, পেনাল্টি-৫) ১১
মোট (২ উইকেট ৬৭ ওভার) ১৭৫
উইকেট পতন : ১/৪৩ (সাদমান), ২/১৪৭ (শান্ত)।
নিউজিল্যান্ড বোলিং :
সাউদি : ১৫-২-৪১-০ (ও-১),
বোল্ট : ১৪-৫-৩৭-০,
জেমিসন : ১৩-৪-৩৫-০ (ও-১),
নিল ওয়াগনার : ১৬-৫-২৭-২,
রবীন্দ্র : ৯-১-২৬-০।