দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত এক হ্যাট্রিক করে করিম বেনজেমা রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়র্টার ফাইনাল উপহার দিয়েছেন। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে পিছিয়ে পড়েও এই ফ্রেঞ্চম্যানের তিন গোলে শেষ ১৬’র দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে পিএসজিকে ৩-১ ব্যেবধানে পরাজিত করেছে গ্যালাকটিকোরা।
এর আগে প্যারিসের প্রথম লেগের ম্যাচে কিলিয়ান এমবাপ্পের শেষ মুহূর্তের গোলে পিএসজি ১-০ গোলে জয় নিশ্চিত করেছিল। কালও ৩৯ মিনিটে এই এমবাপ্পের গোলেই এগিয়ে গিয়েছিল প্যারিসের জায়ান্টরা। দুই লেগ মিলিয়ে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে শেষ আটে পৌঁছালো মাদ্রিদ।
৬১ মিনিটে পিএসজির গোলরক্ষক গিয়ানলুইগি ডোনারুমার ভুলে বেনজেমার গোলের যাত্রা শুরু। ঐ গোলেই কার্লো আনচেলত্তির দল স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। এরপর ১৭ মিনিটের মধ্যে বেনজেমার আরো দুই গোল তারকা সমৃদ্ধ পিএসজিকে বোকা বানিয়ে জয় ছিনিয়ে নেয় আনচেলত্তির শিষ্যরা। পিএসজির হয়ে এমবাপ্পে, লিওনেল মেসি ও নেইমারদের জন্য ইউরোপীয়ান সর্বোচ্চ এই ক্লাব টুর্নামেন্টে শিরোপার অপেক্ষা আরো একবার বাড়লো। অথচ ২৩ মিনিটে ফরাসি তরুন এমবাপ্পের আরো এক দুর্দান্ত গোলে ঘরের মাঠে মাদ্রিদ পরাজয়ের শঙ্কায় পড়েছিল। এমনিতেই প্রথম লেগে এক গোলে পরাজিত মাদ্রিদ কিছুটা হলেও পিছিয়ে থেকেই ম্যাচ শুরু করেছিল। ৬১ মিনিটে বেনজেমা রিয়ালকে সমতায় ফেরানোর পর ৭৬ ও ৭৮ মিনিটে পরপর দুই গোল করে হ্যাট্রিক পূরনের পাশাপাশি দলের জয় নিশ্চিত করেন। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার সাথে মাদ্রিদের প্রায় বেশীরভাগ খেলোয়াড়ই হাঁটু গেড়ে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজেদের আত্মবিশ্বাসকে আরো দৃঢ় করেছে। ক্লাব ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় এই জয়কে আরো কিছুটা হয়ত নিজেদের মনের মধ্যে ধরে রাখতে চেয়েছিল আনচেলত্তি শিষ্যরা।
পুরো ম্যাচের কেন্দ্রবিন্দুতেই ছিলেন ২৩ বছর বয়সী এমবাপ্পে। পিএসজির একমাত্র খেলোয়াড় যাকে ম্যাচের প্রতিটি মুহূর্ত সমর্থন করে গেছেন স্বাগতিক সমর্থকরা। সব কিছু ঠিক থাকলে আসন্ন গ্রীষ্মেই এমবাপ্পে হতে পারেন সান্তিয়াগোর নিজস্ব খেলোয়াড়। এই ম্যাচটিকে ঘিড়ে তাই আগ্রহের কমতি ছিলনা। এমবাপ্পেও তার ভবিষ্যত এই ম্যাচটি উপরই ছেড়ে দিয়েছিলেন। ম্যাচের আগেরদিন অনুশীলনে আঘাত পাওয়ায় নিজের শতভাগ দেয়া নিয়েও চিন্তিত ছিলেন এই ফরাসি তরুণ।
ম্যাচের শুরু থেকেই স্পষ্টভাবেই পিএসজির উপর দাপট দেখাতে থাকে। দানি কারভাহাল অনেকটাই স্বপ্রতিভ হয়ে সমর্থকদের আরো বেশী উজ্জীবিত হবার আহবান জানান। ভিনিসিয়াস জুনিয়র বামদিক থেকে একের পর এক আক্রমন করতে থাকেন। তাকে সহযোগিতা করতে থাকেন ফেডে ভালভার্দে। কিন্তু মাদ্রিদের এই দাপট খুব বেশীক্ষন স্থায়ী হয়নি। এমবাপ্পের হাত ধরে পিএসজি ম্যাচের নিয়ন্ত্রন নিয়ে মাদ্রিদকে পিছু হঠতে বাধ্য করে। আট মিনিটে নেইমারের কার্লিং পাস থেকে এমবাপ্পে শট নিলেও তা সরাসরি থিবো কোর্তোয়ার হাতে ধরা পড়ে। এডার মিলিটাওকে কাটিয়ে এমবাপ্পের আরো একটি শট কোর্তোয়া রক্ষা করেন। মেসি ও মার্কো ভেরাত্তির মধ্যে বল য়আদান প্রদান করে নেইমারের দিকে বাড়িয়ে দেয়া বলটিও কোর্তোপার হাতে জমা দেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। এরপরপরই এমবাপ্পের গোল করলে তা অফসাইডের কারনে বাতিল হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ৩৯ মিনিটে ডেডলক ভাঙ্গতে সক্ষম হয় পিএসজি। কারভাহাল বল ধরতে ব্যর্থ হলেও নেইমারের আরো একটি অসাধারন পাসে এমবাপ্পে সামনে শুধু ডেভিড আলবাকে পান। সেখান থেকেই জোড়ালো শটে এমবাপ্পে কোর্তোয়াকে পরাস্ত করেন।
বিরতির পর নিজেদের নতুন করে গুছিয়ে মাঠে নামে মাদ্রিদ। ৬১ মিনিটে ম্যাচটিকে জমিয়ে তুলেন বেনজেমা। নুনো মেনডেসের একটি ব্যাকপাস চাপে থাকা ডোনারুমা ধরতে ব্যর্থ হলেও ভিনিসিয়াস বল কুড়িয়ে নিয়ে কাটব্যাক করে দেন বেনজেমার দিকে। ফরাসি এই অভিজ্ঞ তারকা সেই পাস থেকেই রিয়ালকে সমতায় ফেরান। এই গোলের পরেই ম্যাচের আবহ পাল্টে যায়। লুকা মড্রিচ, ভিনিসিয়াসের দুটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে এগিয়ে যাওয়া হয়নি স্বাগতিকদের। ৭৬ মিনিটে বেনজেমার দ্বিতীয় গোলটির যোগানদাতা ছিলেন ক্রোয়েট তারকা মড্রিচ। মধ্যমাঠ থেকে ভিনিসিয়াসের সহায়তা বল পেলে মড্রিচের দুর্দান্ত পাসে রিয়ালকে এগিয়ে দিতে কোন ভুল করেননি বেনজেমা। ভিএআর প্রযুক্তির মাধ্যমে গোলটি নিশ্চিত করা হয়। এই গোলের পর দুই লেগ মিলিয়ে সমতায় ফিরে মাদ্রিদ। ভিএআর এর কারনে কিছুক্ষন পরে ম্যাচ শুরু হলে মাত্র আট সেকেন্ডের মধ্যে অকল্পনীয় ভাবে মাদ্রিদ এগিয়ে যায়। পিএসজি ম্যাচ শুরু করলে রডরিগো বল কেড়ে নিয়ে ভিনিসিয়াস ও মারকুইনহোসের সহায়তায় বেনজেমার দিকে তা বাড়িয়ে দেন। নিজের হ্যাট্রিক পূরণের পাশাপাশি দলের জয়ও নিশ্চিত করেন বেনজেমা।