দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারকা আন্দ্রে ফ্লেচারের ব্যাটিং নৈপুন্যে জয়ের ধারায় ফিরলো মুশফিকুর রহিমের খুলনা টাইগার্স।
আজ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অষ্টম আসরের ১৭তম ম্যাচে খুলনা ৯ উইকেটে হারিয়েছে সিলেট সানরাইজার্সকে।
এই জয়ে ৬ খেলা শেষে ৩ জয়-৩ হারে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থস্থানে খুলনা। আর ৫ ম্যাচে ১ জয়ে ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে সিলেট।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেন খুলনা টাইগার্সের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।
ব্যাট হাতে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি সিলেট সানরাইজার্সের দুই ওপেনার ওয়েস্ট ইন্ডিজের লেন্ডন সিমন্স ও এনামুল হক। তৃতীয় ওভারে পেসার খালেদ আহমেদের শিকার হন এনামুল। আর সপ্তম ওভারে পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে বিদায় নেন সিমন্স। টেস্ট মেজাজে ব্যাট করে ১৯ বলে ৬ রান করেন সিমন্স, আর ১০ বলে ৪ রান ছিলো এনামুলের।
খুলনার দুই পেসারের সাফল্যের পর বল হাতে উইকেটের দেখা পান বাঁ-হাতি স্পিনার নাবিল সামাদ। ইনিংসের শুরুতে বল হাতে আক্রমনে আসা নাবিল প্রথম ৩ ওভারে দেন ১০ রান । নিজের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে দক্ষিণ আফ্রিকান কলিন ইনগ্রামকে বিদায় দেন নাবিল। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ইনগ্রাম। শেষ পর্যন্ত নাবিলের ঐ ওভারটি হয় মেডেন উইকেট ।
৩৪ রানে ৩ উইকেট পতনের পর, দলের হাল ধরেন তিন নম্বরে নামা মোহাম্মদ মিঠুন ও সিলেটের অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন। উইকেটে দ্রুত সেট হয়ে রানের চাকা সচল করেন তারা। খুলনার শ্রীলংকার সেক্কুজে প্রসন্নর ১২তম ওভার থেকে ১৮ রান আদায় করেন নেন মিঠুন-মোসাদ্দেক। মোসাদ্দেক ১টি করে চার-ছক্কা ও মিঠুন ১টি ছক্কা মারেন।
আরেক শ্রীলংকান থিসারা পেরেরার ১৫তম ওভারে আসে ১৩ রান। কামরুলের পরের ওভার থেকে উঠে ১৪ রান। তবে ১৭তম ওভারে খালেদের দ্বিতীয় শিকারে পরিনত হয়ে বিদায় নেন মোসাদ্দেক। আউট হওয়ার আগে ৩০ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৪ রান করেন তিনি । চতুর্থ উইকেটে ৫০ বলে ৬৮ রান তুলে দলের স্কোর ১শতে নিয়ে মিঠুন ও মোসাদ্দেক।
অধিনায়কের ফেরার পরের ওভারে পেরেরাকে পরপর দু’টি ছক্কা মেরে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১৫তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন মিঠুন। কামরুলের করা ১৯তম ওভারে ৩টি চার হাকান মিঠুন। কিন্তু শেষ ওভারে সৌম্য সরকারের প্রথম পাঁচ বলে মিঠুনকে হারিয়ে মাত্র ৩ রান পায় সিলেট। তবে শেষ ডেলিভারিতে ছক্কা মারেন নাদিফ চৌধুরি। এতে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৪২ রান পায় সিলেট।
৫১ বল খেলে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭২ রান করেন মিঠুন। খুলনার খালেদ ২০ রানে ২ উইকেট নেন।
জবাবে ১৪৩ রানের লক্ষ্য খেলতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে খুলনা। দুই ওপেনার ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে ফ্লেচার ও সৌম্য সরকার পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভারে ৬৫ রান সংগ্রহ করেন। এরমধ্যে স্পিনার সোহাগ গাজীর করা দ্বিতীয় ওভারে আসে ১৫ রান। ২টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন ফ্লেচার।
সিরাজ আহমেদের করা তৃতীয় ওভারে সৌম্যর দু’টি চারে আসে ১০ রান। বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল ইসলামের প্রথম ও ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ১৫ রান পায় খুলনা। সেখানে সৌম্যর ১টি করে চার ও ছক্কা ছিলো। ফ্লেচার হাকান ১টি চার। আর পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মোসাদ্দেক হোসেনকে পরপর তিনটি ছক্কা মারেন ফ্লেচার।
১১তম ওভারের তৃতীয় বলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ২৯তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন ফ্লেচার। আর পঞ্চম বলে সৌম্যকে বিদায় দিয়ে সিলেটকে প্রথম সাফল্য এনে দেন নাজমুল। ৩১ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৩ রান করেন সৌম্য।
দলীয় ৯৯ রানে খুলনার প্রথম উইকেট পতন ঘটে। তখন জয় থেকে ৪৪ রান দূরে খুলনা। ওভার বাকী ছিলো ৯টি। কিন্তু ২২ বলে ঝড়ো ৪৫ রানের জুটি গড়ে খুলনার জয় নিশ্চিত করেন ফ্লেচার ও ব্যাটিংয়ে প্রমোশন পাওয়া হার্ড-হিটার পেরেরা।
মুক্তার আলীর করা ১২তম ওভারে ২০ রান নেন পেরেরা ও ফ্লেচার। ১৫তম ওভারের প্রথম দুই বলে ১০ রান নিয়ে দলের লক্ষ্য স্পর্শ করেন পেরেরা। তখনও ম্যাচের ৩৪ বল বাকী ।
৪৭ বলে ৫টি করে চার-ছক্কায় অপরাজিত ৭১ রান করেন ফ্লেচার। ৯ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় অপরাজিত ২২ রান করেন পেরেরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
সিলেট সানরাইজার্স : ১৪২/৫, ২০ ওভার (মিঠুন ৭২, মোসাদ্দেক ৩৪, খালেদ ২/২০)।
খুলনা টাইগার্স : ১৪৪/১, ১৪.২ ওভার (ফ্লেচার ৭১*, সৌম্য ৪৩, নাজমুল ১/৩৯)।
ফল : খুলনা টাইগার্স ৯ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : আন্দ্রে ফ্লেচার (খুলনা টাইগার্স)।