ফাইনাল ম্যাচের শুরুতেই দুই রানে এক উইকেট হারিয়ে শুরু করে শ্রীলঙ্কা। ৫৮ রানে হারিয়ে যায় ৫ উইকেট সেই ভরা ডুবি থেকে উঠে পাকিস্তানকে একটি লড়াই সূচক রান ছুড়ে দেয়া এবং তা ডিফেন্ড করে ফাইনাল জয় করা, এ যেন এক অসাধ্য সাধন করলো লঙ্কানরা।
রোববার এশিয়া কাপের ফাইনালে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে ২৩ রানে হারিয়েছে লঙ্কানরা। শুরুতে ব্যাট করে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৭০ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কা। জবাবে ১৪৭ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান।
এবার নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হলো তারা। অন্যদিকে প্রায় ১০ বছর পর এশিয়া কাপের শিরোপা জেতার একদম কাছ থেকে ফিরলো পাকিস্তান। এর আগে সর্বশেষ ২০১২ সালে বাংলাদেশকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিলো তারা। অন্যদিকে ২০১৪ সালের পর ফের এই শিরোপার স্বাদ পেল শ্রীলঙ্কা। সেবার বাংলাদেশের মাটিতে ওয়ানডে ফরম্যাটের আসরে পাকিস্তানকে হারিয়েই শিরোপা ঘরে তুলেছিলো তারা।লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুটা ভালো হয়নি পাকিস্তানের। যদিও প্রথম ওভারেই তালগোল পাকিয়ে ফেলেন লঙ্কান পেসার দিলশান মাদুশঙ্কা। তার সৌজন্যে কোনো বৈধ বল ছাড়াই প্রথম ৯ রান পেয়ে যায় পাকিস্তান। প্রথম বলটি নো, এরপরের চার বল ওয়াইড। মাঝে চতুর্থ ওয়াইড বলটি আবার কিপারের গ্লাভস গলে বাউন্ডারিতে পৌঁছে যায়। পরের বলটাও ওয়াইড হয়। ৬ বারের চেষ্টায় প্রথম বৈধ বলটি করতে পেরেছেন মাদুশাঙ্কা। সেটিতে আসে ১ রান। প্রথম ওভার থেকে ১২ রান পায় পাকিস্তান।
পাকিস্তানের শুরুর সেই স্বস্তি অবশ্য দীর্ঘায়িত হয়নি। কারণ পরের দুই ওভারে সেভাবে রান তুলতে পারেনি তারা। চতুর্থ ওভারে জোড়া আঘাত হারেন লঙ্কান পেসার প্রমোদ মাদুশান। ওভারের দ্বিতীয় বলে বাবর আজমকে বিদায় করে দেন তিনি। ব্যাট হাতে পাকিস্তানি অধিনায়কের দুঃসময় যেন কাটছেই না। এবার তিনি ফিরেছেন মাত্র ৫ রান করেই। পরের বলেই নতুন ক্রিজে আসা ফখর জামানকে (০) বোল্ড করেন মাদুশান। সেখান থেকে লড়াই শুরু মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার আহমেদের।
আজও হেসেছে এবারের আসরে দারুণ ফর্মে থাকা রিজওয়ানের ব্যাট। ইফতিখারকে নিয়ে ৫৯ বলে তার ৭১ রানের জুটি পাকিস্তানকে খাদের কিনারা থেকে ফেরায়। ইফতিখার অবশ্য বেশিদূর যেতে পারেননি। ৩১ বলে ৩২ রানের ধৈর্যশীল ব্যাটিং করে মাদুশানের তৃতীয় শিকার হয়ে ফেরেন এই ব্যাটার। রিজওয়ানের ওপর চাপ বাড়িয়ে দলীয় ১০০ পার হওয়ার পর ফিরে যান মোহাম্মদ নেওয়াজ (৬)।
চাপের মুখেও পাকিস্তানের ভরসা হয়ে ছিলেন রিজওয়ান। করুণারত্নের বলে স্লগ সুইপে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে তুলে নিয়েছিলেন দারুণ এক ফিফটিও। কিন্তু ততক্ষণে তিনি বল খেলে ফেলেছেন ৪৭টি। শেষ ৪ ওভারে পাকিস্তানের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৬১ রান। অর্থাৎ প্রতি ওভারে দরকার ছিল ১৫.২৫ রান করে। ফলে বাধ্য হয়ে ব্যাট চালিয়ে খেলতে হয় রিজওয়ানকে। কিন্তু তাতেই বাঁধে বিপত্তি। ১৭তম ওভারে লঙ্কান স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে স্লপ সুইপ খেলতে গিয়েই ডিপ মিড উইকেটে থাকা গুনাথিলাকার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ৪৯ বলে ৫ রানের ইনিংস খেলার পথে তিনি ৪টি চার ও ১টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন।
রিজওয়ানের পর হাসারাঙ্গার ওভারেই বিদায় নেন পাকিস্তানের আরেক ব্যাটিং ভরসা হাসান আলীও। রানের খাতা খোলার আগে প্রথম বলেই হাসারাঙ্গার গুগলিতে পরাস্ত হন তিনি। বল সরাসরি স্ট্যাম্প ভেঙে দেয়। ওই ওভারের পঞ্চম বলে ফের হাসারাঙ্গার আঘাত। এবার খুশদিল শাহকে (২) গুগলিতে বোকা বানান তিনি। খুশদিল স্লগ করতে গিয়ে থার্ড ম্যাচ অঞ্চলে থাকা থিকসানার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পাকিস্তানের জন্য শেষ ৩ ওভারে ৫৯ রানের লক্ষ্য পার করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। শাদাব খান ৬ বলে ৮ রান করে থিকসানার শিকার হলে প্রমাদ গুনতে থাকে পাকিস্তান। এরপর নাসিম শাহ (৪) ও হারিস (১৩) শুধু ব্যবধানটাই কমাতে পেরেছেন।
বল হাতে শ্রীলঙ্কার মাদুশান একাই নিয়েছেন ৪ উইকেট। হাসারাঙ্গার ঝুলিতে গেছে ৩টি এবং চামিকা করুণারত্নে ২টি ও থিকসানা নিয়েছেন ১ উইকেট।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা একদমই ভালো হয়নি লঙ্কানদের। ইনিংসের তৃতীয় বলে কোনো রান না করেই নাসিম শাহর বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরত যান কুশল মেন্ডিস। আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কাও নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি। হারিস রউফকে তুলে মারতে গিয়ে ঠিকঠাক টাইমিং হয়নি, মিড অফে দাঁড়ানো বাবর আজম পেছনের দিকে দৌড়ে ক্যাচ নেন দারুণভাবে।
১১ বল খেলে ৮ রান করেন নিশাঙ্কা। এ দুজনের বিদায়ের পর ইনিংস গড়ার দায়িত্ব নেন ডি সিলভা। কিন্তু তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি দানুস্কা গুনাতিলাকাও। রউফের দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হন তিনি, ৪ বল খেলে ১ রান করে। পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৪২ রান তুলে শ্রীলঙ্কা। এরপরও ভাগ্য বদলাচ্ছিল না তাদের। একপ্রান্তে আগলে থাকা ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ফেরেন ইফতেখার আহমেদের বলে। বোলারের হাতে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে ৪ চারে ২১ বলে ২৮ রান করেন তিনি। ৩ বলে ২ রান করে আউট হয়ে যান লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকাও।
এরপরই শুরু হয় শ্রীলঙ্কার পাল্টা আক্রমণ। দারুণ সব শটে বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন হাসারাঙ্গা। কিন্তু হারিস রউফের বলে উইকেটের পেছনে মোহাম্মদ রিজওয়ানকে ক্যাচ দিয়ে আউট হতে হয় তাকে। এর আগেই অবশ্য টানা দুই বাউন্ডারি হাঁকান হাসারাঙ্গা, সব মিলিয়ে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ২১ বলে ৩৬ রান করেন তিনি। তার বিদায়ের পরও রানের গতি থামতে দেননি রাজাপক্ষে।
লঙ্কানদের রান দেড়’শ ছাড়ানোর মূল কৃতিত্বটা তার। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে এই ব্যাটার ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৫ বলে করেন ৭১ রান। পাকিস্তানের পক্ষে ৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে ২৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন হারিস রউফ।