সাকিব আল হাসানের সাথে আর একজন ব্যাটার বড় ইনিংস খেললেই, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছুঁড়ে দেয়া ১৯৪ রান তাড়া করার সুযোগ পেত বাংলাদেশ। কিন্তু সাকিবের মত বড় ইনিংস অন্য কোন ব্যাটার খেলতে না পারায় ৩৫ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি হারতে হয়েছে বাংলাদেশ। সেই সাথে বোলিংয়ে আরও কিছু কম রান দিলে, টার্গেটাও হাতের নাগালে থাকতো। তখন ম্যাচের চিত্রপট অন্যরকম হতে পারতো। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে হারের এমন সব আক্ষেপই বাংলাদেশের সামনে।
গতরাতে ডোমিনিকার উইন্ডসর পার্কে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে টস হেরে বল করে নেমেছিলো বাংলাদেশ। ২৬ রানের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ব্যাটারকে প্যাভিলিয়নে পাঠালেও পরের দিকে প্রতিপক্ষের উপর চাপ ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রান্ডন কিং ৪৩ বলে ৫৭ রান করলেও, বাংলাদেশ বোলারদের উপর ছড়ি ঘুড়িয়েছেন রোভম্যান পাওয়েল।
মাত্র ২০ বলে হাফ-সেঞ্চুরির তুলে নেন পাওয়েল। শেষপর্যন্ত ২৮ বলে ২টি চার ও ৬টি ছক্কায় অপরাজিত ৬১ রান করেন তিনি। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১৯৩ রানে।
১৯৪ রানের টার্গেটে একাই লড়াই করেছেন বাংলাদেশের সাকিব। সতীর্থদের সহায়তায় না পাওয়ায় উইকেট বাঁিচয়ে খেলেছেন তিনি। শেষ দিকে দ্রুত রান তুলে বাংলাদেশের হারের ব্যবধান কমিয়েছেন সাকিব। ৫২ বলে অপরাজিত ৬৮ রান করেন সাকিব। তাকে সঙ্গ দিতে গিয়ে ৩৪ রানে থামেন আফিফ হোসেন। তবে সাকিব বা আফিফের মত আরও ১টি ইনিংস হলেই, ম্যাচের চিত্র পাল্টে যেত। ম্যাচ শেষে এমন আক্ষেপ ঝড়েছে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কন্ঠে।
তিনি বলেন, ‘বোলিংয়ে কয়েকটি ওভারে আমরা বেশি রান দিয়ে ফেলেছি। বোলিংটা যদি আমরা আরেকটু ভালো করতে পারতাম, লক্ষ্যটা যদি কম হতো তাহলে হয়তো আমাদের জন্য ভালো হতো। আমরা যেখানে বল করতে চেয়েছি, সেখানে বল করতে পারিনি। পরিকল্পনা অনুয়ায়ী বোলিং হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাটিংয়েও আমরা যথেষ্ট ভালো ছিলাম না। সাকিব ভালো ব্যাট করেছে, তবে অন্য প্রান্তে আর কারও অবদান রাখা জরুরি ছিল। পাওয়ার প্লের সুবিধা নিতে হতো। এরপর সেই মোমেন্টাম বয়ে নিয়ে যেতে হতো। কিন্তু সাকিব ছাড়া আফিফ ভালো খেলেছে, আর কোন ব্যাটার কিছু করতে পারেনি।’
সর্বশেষ ১২ ম্যাচে মাত্র ১টি জয় বাংলাদেশের। এরমধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে গতরাতের হারও আছে। তবে সাফল্য পেতে দলগত পারফরমেন্স চান মাহমুদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘সবসময় একটাই লক্ষ্য থাকে, ম্যাচ জেতা। টি-টোয়েন্টিতে আমরা যেরকম দল, ভালো করতে হলে দল হিসেবে ভালো খেলতে হবে। প্রতি জায়গায় যার যা ভূমিকা, তা পালন করতে হবে। তাহলে দল হিসেবে আমরা ভালো পারফর্ম করবো। এটাই আমাদের শক্তির জায়গা।’
এ ম্যাচে দু’টি পরিবর্তন এনে মাঠে নামে বাংলাদেশ। পিঠের ইনজুরিতে একাদশের বাইরে ছিটকে যান মুনিম শাহরিয়ার। তাই তার জায়গায় ওপেনার হিসেবে নেমেছিলেন লিটন। কিন্তু ৫ রানের বেশি করতে পারেননি লিটন।
মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘লিটন আমাদের সেরা ব্যাটার। আপনি সবসময় চাইবেন আপনার সেরা ব্যাটারকে সমর্থন দিতে। লিটন টেস্ট, ওয়ানডেতে খুবই ভালো ব্যাটিং করছে, ধারাবাহিকতা ধরে রেখে খেলছে। টি–টোয়েন্টিতে হয়তো সেটা পারছে না। তবে সে আমাদের সেরা ব্যাটার। টি–টোয়েন্টিতে যে কোন ব্যাটারের যে কোনো জায়গায় ব্যাটিং করার সামর্থ্য থাকতে হবে এবং লিটনের সেটা আছে।’
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে চার নম্বরে নেমেছিলেন লিটন। আর দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ওপেনিংয়ে লিটন। মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘সত্যি বলতে, টি-টোয়েন্টিতে আমার মনে হয়, সবাইকে অনেক ফ্লেক্সিবল থাকতে হবে। যে কোনো ব্যাটারের যে কোনো জায়গায় ব্যাট করার সামর্থ্য থাকতে হবে এবং লিটনের সেটা আছে। গত বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লিটন চার নম্বরে ব্যাট করে ভালো করলো। আর যেহেতু আমরা ওপেনিংয়ে এখনও ভালো করতে পারছি না বা এখনও ধারাবাহিক কাউকে পাচ্ছি না, এই জায়গায় হয়তো ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলাতে হতে পারে।’