স্বাভাবিকভাবে দেশের হয়ে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন নিউজিল্যান্ডের অভিজ্ঞ ব্যাটার রস টেইলর। হ্যামিল্টনে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ শুরু আগে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় চোখের কোণ জল চিকচিক করছিলো টেইলরের। তখন টেইলরের সাথে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার তিন সন্তান- ম্যাকেঞ্জি, জন্টি ও অ্যাডিলেড।
জাতীয় সঙ্গীত শেষে চোখের জল মুছেছেন টেইলর। সেটি স্পষ্টভাবে টিভি স্কিনে ভেসে উঠলো। এরপর তিন সন্তানকে চুমু দিয়ে ভালোবাসার আলিঙ্গনে ভাসিয়ে দেন টেইলর।
১৬ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারর ইতি টানতে দেশের মাটিকেই বেছে নেন টেইলর। তাই নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেটি হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে নিউজিল্যান্ড। ইনিংসের ৩৯তম ওভারের ব্যাট হাতে নামেন টেইলর। ব্যাট হাতে নামার সময় গার্ড অব অনার পেয়েছেন টেইলর। গত জানুয়ারিতে ক্রাইস্টচার্চে শেষ টেস্ট খেলতে নামার সময় প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচেও গার্ড অব অনার পেয়েছিলেন টেইলর।
ব্যাট হাতে শেষবারের মত ২২ গজে গিয়ে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি টেইলর। ১৬ বল খেলে ১টি ছক্কায় ১৪ রান করেন টেইলর। নিজের ট্রেডমার্ক স্লগে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মেরেছিলেন তিনি। এই স্লগ করতে গিয়েই বোলার লোগান ভ্যান বিকের হাতে ক্যাচ দেন টেইলর। ১৬ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ইনিংসটি ১৬ বলে যায়। আউটের পর টেইলরের সাথে হাত মিলিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের ক্রিকেটাররা। পরিসংখ্যানই বলে দেয় ক্রিকেটে টেইলরের অর্জন।
২০০৬ সালের মার্চ নেপয়িারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করেছিলেন ৩৮ বছর বয়সী টেইলর। একই বছর ওয়েলিংটনে শ্রীলংকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় টেইলরের। পরের বছর জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় টেইলরের।
১৬ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৪৫০ ম্যাচ খেলেছেন টেইলর। ৪০টি সেঞ্চুরি ও ৯৩টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ১৮,১৯৯ রান করেছেন তিনি। যা নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সেরা পারফরমেন্স। ১১২ টেস্টে ৭৬৮৩ রান, ২৩৫ ওয়ানডেতে ৮৬০৭ রান ও ১০২ টি-টোয়েন্টিতে ১৯০৯ রান করেছেন তিনি। টেস্ট ও ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেছেন টেইলর। এছাড়া প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তিন সংস্করণেই ১০০ ম্যাচ খেলেছেন টেইলর।
শেষ ওয়ানডে সিরিজটি মোটেও ভালো কাটেনি টেইলরের। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রথম ও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে যথাক্রমে ১১ ও ১ রান করেছিলেন। ক্রাইস্টচার্চে বাংলাদেশের শেষ টেস্টে করেছিলেন ২৮ রান। আর ২০২০ সালের নভেম্বরে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে করেন শুন্য রানে অপরাজিত ছিলেন টেইলর।
দেশের হয়ে সর্বোচ্চ টেস্ট খেলার রেকর্ডে সাবেক অধিনায়ক ড্যানিয়েল ভেট্টোরির সাথে যৌথভাবে এক কাতারে টেইলর। আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে চার নম্বরে ব্যাট করা ব্যাটারদের মধ্যে টেইলরের ৭৬৯০ রানই এখন অবধি সেরা।
ফিল্ডার হিসেবেও সুনাম ছিলো টেইলরের। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৪৫০ ম্যাচে ৩৫০টি ক্যাচ নিয়েছেন তিনি। বিশ^ ক্রিকেটে এই তালিকায় তৃতীয়স্থানে আছেন টেইলর। ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে ১টি ক্যাচ নিয়ে সংখ্যাটা ৩৫০এ নেন তিনি। বল হাতে টেস্টে ৩ উইকেট আছে তার।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তিন ফরম্যাটের শেষ তিন ম্যাচেই জয় পেয়েছেন টেইলর। গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে ১১৭ রানে জয়, আজ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ১১৫ রানে জয় ও ২০২০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৭২ রানে জয়। তিন জয় নিয়ে ১৬ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টানলেন ৩৮ বছর বয়সী টেইলর।