You are here
Home > খেলাধুলা > ওয়ার্ন অনেক কিছু দিয়েছেন, কিন্তু তার আরো দেয়ার ছিল : গ্রেগ চ্যাপেল

ওয়ার্ন অনেক কিছু দিয়েছেন, কিন্তু তার আরো দেয়ার ছিল : গ্রেগ চ্যাপেল

মাত্র ৫২ বছরে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গত শুক্রবার মারা যান অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি স্পিনার শেন ওয়ার্ন। তার মৃত্যুতে ক্রিকেট বিশ্ব শোকাহত। 
কিংবদন্তি ক্রিকেটার ওয়ার্নের স্মরণে এক কলাম লিখেছেন চ্যাপেল। সেই কলামে ওয়ার্নের প্রশংসাই শুধু করেননি, তার সাথে কিছু স্মৃতিও তুলে ধরেছেন চ্যাপেল। 
চ্যাপেল লিখেন, ব্যাড বয় ইমেজ থাকলেও, সেটি পুরোপুরি সত্য নয়। তাকে ততটুকুই দেখা যেত, যতটুকু সে সবাইকে দেখাতো। তাই তার ব্যাড বয় ইমেজটাই সবাই জানে। তবে কাছ থেকে যারা দেখেছে, তারাই ভালো করে জানে সত্যিকারের ওয়ার্নকে।
নিজের কলামে চ্যাপেল আরও লিখেন : 
আমি যখনই শেন ওয়ার্নের কথা চিন্তা করি, আমার তখন আমেরিকা লেখক, কবি ও প্রকৃতিবিদ হেনরি ডেভিড থোরেউর কথা মনে পড়ে। বিষয়টি এমন নয় তুমি কিসে তাকিয়ে আছো, বিষয়টি হলো তুমি কি দেখছো। শেন ওয়ার্ন প্রথমে একজন জাদুকর, পরে কিংবদন্তি লেগ স্পিনার।
আমি খুবই ভাগ্যবান যে, ওয়ার্নের অবসর পরবর্তী সময়ে ভিক্টোরিয়ার থর্নটন ও ক্যাথ্রেড্রাল লজে তার পছন্দের গলফ ক্লাবে একসাথে খেলার সুবাদে তাকে কাছ থেকে চিনতে পেরেছি। আপনি যখন কারও সাথে গলফ কোর্সে চার ঘণ্টা সময় কাটাবেন এবং পরে খেলা নিয়ে কথা বলবেন, তখন তাকে ভালো চিনতে পারবেন।
আপনারা ওয়ার্নের যা দেখেছেন সেটিই সব নয়। আপনারা তা-ই দেখেছেন, যা সে দেখতে দিয়েছে। মিডিয়া তাকে যেভাবে তুলে ধরেছে তা দেখেই, বেশিরভাগ মানুষের ওয়ার্নের সম্পর্কে ধারণা জন্মেছে।
ওয়ার্ন ছিলো সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিযোগী। সে খেলাটা খুব ভালোবাসতো এবং প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নিজের বুদ্ধিমত্তার পুরোটা ব্যবহার করতো। তার নিজের ওপর ছিল অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস। আমি প্রায়ই দেখেছি, সে কিভাবে নিজের বিশ্বাসের ওপর জাদুকরী সব কীর্তি করতো।
নিজের সুপারপাওয়ারের ওপর অনেক বিশ্বাস ছিল ওয়ার্নের, তবে যখন কাজে লাগতো না, তখন প্রায়ই রেগে যেত। এটিকে প্রায়ই দূর্ভাগ্য হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হতো। তার গলফের প্রতিপক্ষরা প্রায়ই দূর্ভাগ্যের কথা বলতে চাইতো।
গলফ  কোর্সে আলাপের সময় ওয়ার্ন সবসময় তার তিন সন্তান ব্রুক, জ্যাকসন এবং সামারের ব্যাপারে কথা বলতে আগ্রহী থাকতো। তিনি ছিলেন সদয়, যত্নশীল এবং সর্বোপরি, একজন স্নেহময়ী  পিতা। অন্যদের প্রতি তার অনেক সদয় আচরণ শুধুমাত্র তার নিকটতম ব্যক্তিদের কাছে পরিচিত ছিল।
একজন লেগস্পিনারের চেয়েও বেশি কিছু ওয়ার্ন। সে একজন সত্যিকারের বিনোদনকারী ছিল। যে কি না যেখানেই যেতো, নিজের কারিশমা দিয়ে মাতিয়ে রাখতো। তার সাফল্য খেলাটির দর্শক অনেক বাড়িয়েছে এবং লেগ স্পিনকে পুনরায় জীবন দিয়েছে। এতে নতুন প্রজন্মে অনেক লেগ স্পিনার বেরিয়েছে, যারা আলতো পায়ে ক্রিজে গিয়ে বল হাতে জাদু দেখাতে চায়। তাদের যে জিনিসটি নেই তা হলো ওয়ার্নের শক্তিমত্তা এবং সহজাত বুদ্ধি। তাই খুব কম বোলারই সেই উচ্চতায় যেতে পেরেছে।
অস্ট্রেলিয়ার তৈরি সেরা ব্যাটার হিসেবে ডন ব্র্যাডম্যান অপ্রতিন্দ্বন্দি, ওয়ার্ন সেরা স্পিনার, কিথ মিলার সেরা অলরাউন্ডার, জেফ থমসন দ্রুততম পেসার এবং ডেনিস লিলি সেরা পেসার হিসেবে অপ্রতিন্দ্বন্দি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ওয়ার্ন একজন কিংবদন্তি, ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সাথে একটি আলোাকিত ব্যক্তিগত জীবনকে একত্রিত করতে পেরেছিলেন তিনি। তার চেয়ে কেউই ক্রিকেটে বড় প্রভাব ফেলতে পারেনি।
তিনি সকলের সাথে তার সময় দিতে উদার ছিলেন। নিজের মত করে বাঁচতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিলেন ওয়ার্ন। অন্যরা তার সম্পর্কে কি ভাবছে, সে সম্পর্কে সত্যিকারের কোন চিন্তা তিনি করেননি। তিনি নিজের প্রতি সত্য এবং তার কাছের মানুষদের প্রতি খুব অনুগত ছিলেন।
ক্রিকেট বিশ্বের প্রতিটি কোণে ওয়ার্নের প্রভাব বিদ্যমান। সেটি অনেক দূরে ছাড়িয়েছে। সব জায়গা থেকে শ্রদ্ধা আসছে, তার অনুরাগী এবং অন্যদের কাছ থেকে সম্মান আসছে। আমরা তার মতো আর কখনও কাউকে দেখতে পাবো না, এমনকি কাউকে কাছেও না।
শ্রদ্ধা শেন।

Similar Articles

Leave a Reply

Top