রোববার দোহার লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে কাতার বিশ্বকাপের ব্লক ব্লাস্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স। বিশ্বকাপের ফাইনালে এই ধরনের দলগুলোকেই ফুটবল অনুরাগীরা আশা করে। সেই প্রত্যাশা পূরনে ফেবারিট দল হিসেবেই এই দুই দল ফাইনালে উঠেছে। আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসির বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে বিশ^কাপের শিরোপাটা এখানো অধরা রয়ে গেছে। সে কারনেই বিশ^কাপের শিরোপা হাতে তোলার শেষ সুযোগটি হাতছাড়া করতে চাইবে না টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এলএম টেন। অন্যদিকে ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের এই মুহূর্তের সেরা তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পেও দলকে সাফল্য এনে দিতে দৃঢ় প্রত্যয়ী।
নানা কারনে মাঠের বাইরে বিভিন্ন ঘটনা-দূর্ঘটনা নিয়ে কাতার বিশ^কাপ নিয়ে সমালোচনার কমতি ছিলনা। কিন্তু বিশ^ ফুটবলের দুই পরাশক্তি ফাইনালে উঠে সেই সমালোচনাকে অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে। সবাই এখন জমাট একটি লড়াইয়ের ক্ষন গুনছে।
অসুস্থতার কারনে ফ্রান্সের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় অনুশীলনে যোগ দিতে না পারায় দু:শ্চিন্তা রয়েছেন কোচ দিদিয়ের দেশ্যম। যে কারনে কাল ফাইনালের শুরু থেকেই প্রতিটি মিনিট কাজে লাগাতে চায় ফ্রান্স। এনিয়ে তৃতীয়বারের মত উভয় দলই বিশ^কাপের শিরোপা নিশ্চিতের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে। চার বছর আগে মস্কোতে শিরোপা হাতে পাবার পর টানা দ্বিতীয়বারের মত ফাইনালে উঠেছে লেস ব্লুজরা। এর আগে ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে টানা দুইবার বিশ^কাপ শিরোপা নিজেদের কাছে রাখার কৃতিত্ব দেখিয়েছিল ব্রাজিল। এছাড়া দেশ্যমের সামনেও সুযোগ একই দলের কোচ হিসেবে বিশ^কাপ শিরোপা জয়ের। ১৯৩০ সালে ইতালির কোচ ভিত্তোরিও পোজ্জো এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন।
৩৫ বছর বয়সী মেসির এটাই শেষ বিশ^কাপ। কাতারে আসার আগেই কার্যত এটা ধরেই নেয়া হয়েছিল মেসির সামনে বিশ^কাপ জয়ের এটাই শেষ সুযোগ। ক্লাব পর্যায়ে এ পর্যন্ত সবকটি শিরোপা জয় করা হয়ে গেছে বার্সেলোনার সাবেক এই তারকার। একইসাথে ক্যারিয়ারে সাতবার জিতেছেন ব্যালন ডি’অর। গত বছর কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়ে আর্জেন্টিনাকে শিরোপা উপহার দিয়েছিলেন। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে এটাই এখন পর্যন্ত মেসির সর্বোচ্চ শিরোপা। সৌদি আরবের কাছে পরাজিত হয়ে বিশ^কাপের শুরুতেই হোঁচট খাওয়া সত্বেও মেসির দুর্দান্ত পারফরমেন্সে ঠিকই ঘুড়ে দাঁড়ায় আর্জেন্টিনা। দলের উঠতি তারকা জুলিয়ান আলভারেজ ইতোমধ্যেই চার গোল করে ফেলেছেন।
আর্জেন্টাইন কোচ লিওনের স্কালোনি বলেছেন, ‘ফাইনালে খেলতে আসাটা সবসময়ই বিশেষ কিছু। কিন্তু এখনো একধাপ বাকি আছে।’
২০১৪ সালের ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে জার্মানীর কাছে ১-০ গোলে পরাজয়ের ক্ষত এখনো মানসিক ভাবে মেসিকে পীড়া দেয়। সেই পরাজয় থেকে বেরিয়ে আট বছর পর আরো একটি ফাইনালে মেসি আর কোন সুযোগ নষ্ট করতে চায়না। ইতোমধ্যে পাঁচ গোল করে গোল্ডেন বুটের অন্যতম দাবীদার মেসি টুর্নামেন্ট সেরার দৌঁড়েও অনেকখানি এগিয়ে রয়েছে। সতীর্থদের বেশ কিছু বলের যোগান দিয়ে এ্যাসিস্টের দিক থেকে মেসি নিজেকে এবারের আসরে অনন্য করে তুলেছেন। ১৯৮৬ সালে মেক্সিকোতে আর্জেন্টিনার জয়ে দিয়েগো ম্যারাডোনা যেভাবে দলকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন মেসির সামনেও সেই কৃতিত্ব অর্জনের শেষ সুযোগ রয়েছে।
ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে ৩-০ গোলের জয়ের পর মেসি বলেছিলেন, ‘আমি সত্যিই বিশ^কাপটা দারুন উপভোগ করছি। এবারের বিশ^কাপ আমার কাছে বিশেষ কিছু।’
তবে এবারের আসরটি কি মেসির টুর্নামেন্ট হিসেবেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে নাকি ফ্রান্স আবারো নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের জানান দিবে, এই প্রশ্নের উত্তর কালকেই পাওয়া যাবে।
লেস ব্লুজরা এবারের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ঠিকই, কিন্তু সব ম্যাচে তারা নিজেদের যোগ্যতার প্রমান দিতে পারেনি। তার উপর এই মুহূর্তে দলে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় অসুস্থ হওয়ায় পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে মাঠে নামাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারানে ও ইব্রাহিমা কোনাটেসহ কিংসলে কোম্যান ঠান্ডা জনিত অসুস্থতায় শুক্রবার অনুশীলনের বাইরে ছিলেন। সেমিফাইনালে মরক্কোর সাথে ডায়ট উপামেকানোর স্থানে কোনাটে খেলেছেন। উপামেকানো অসুস্থতার কারনে দল থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন। ঐ ম্যাচে আদ্রিয়েন রাবিয়তও খুব একটা স্বস্তিবোধ না করায় পুরো স্কোয়াডের বাইরে ছিলেন। যদিও একটি খেলোয়াড়কে ফ্রান্স কখনোই মিস করতে চাইবে না, তিনি হলেন এমবাপ্পে। চার ম্যচে পাঁচ গোল করা এ তারকা ইংল্যান্ড ও মরক্কোর বিরুদ্ধে কোন গোল করতে না পারলেও পুরো ম্যাচেই দুর্দান্ত ছিলেন। চার বছর আগে টিনএজার এমবাপ্পের কল্যাণেই ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে পরাজিত করে শিরোপা ঘরে তুলেছিল ফ্রান্স। ঐ আসরে শেষ ষোলতে আর্জেন্টিনাকে বিদায় করার ক্ষেত্রেও এমবাপ্পের ভূমিকা ছিল।
বর্তমানে পিএসজিতে মেসি-এমবাপ্পে সতীর্থ। কিন্তু বিশ^কাপের ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে খেলতে নেমে স্বাভাবিক ভাবেই কেউ কাউকে ছাড় দিবেনা। ফরাসি মিডফিল্ডার অরেলিয়েন শুয়ামেনি বলেছেন, ‘অবশ্যই তাদের দলে মেসি রয়েছে। কিন্তু একইসাথে তার সাথে আরো ১০জন খেলোয়াড় রয়েছে যাদের যোগ্যতাও কম নয়। সে কারনেই আমাদের সবদিক থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে। নিজেদের সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে ইতিহাসের অংশ হতে আমরা মুখিয়ে আছি।’
দেশ্যম বলেছেন, ‘যতটা সম্ভব মেসির প্রভাব সীমিত করার চেষ্টা আমরা করে যাব। একইভাবে আর্জেন্টিনাও আমাদের কিছু খেলোয়াড়কে আটকানোর চেষ্টা করবে।’
মধ্যমাঠের নতুন ভূমিকায় গত কয়েকটি ম্যাচে আঁতোয়ান গ্রীজম্যান অসাধারন খেলেছেন। কাল ফ্রান্স জিততে পারলে মেসিকে টপকে গ্রীজম্যানও গোল্ডেন বলের অন্যতম দাবীদার হয়ে উঠতে পারেন।
নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আর্জেন্টিনা দলে ফিরেছে দুই ডিফেন্ডার গঞ্জালো মনটিয়েল ও মার্কোস এ্যাকুনা। একইসাথে অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়াও পুরো ফিট হয়ে দলে ফিরেছেন।