চতুর্থ দিনের প্রথম ২৬ মিনিটেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে অ্যান্টিগা টেস্ট ৭ উইকেটে হারে সফরকারী বাংলাদেশ। টেস্টের প্রথম তিনদিনের কোন সেশনেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি সাকিব আল হাসানের দল। কারণ, টেস্টের শুরুতেই ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ।
টেস্টের প্রথম সেশনের প্রথম ঘন্টাতেই ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এক বাজে সেশনের কারনে টেস্টের শুরুতেই ম্যাচ থেকে বাংলাদেশ ছিটকে পড়েছে বলে মনে করেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব।
সিরিজের প্রথম টেস্ট শেষে সংবাদ সম্মলনে সাকিব বলেন, ‘আমরা যদি নিজেদেরকে আরও ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারতাম, তবে সেটি ভালো হতো। প্রথম দিন প্রথম সেশনে ৬ উইকেট হারিয়ে লাঞ্চে যাওয়াটা ভালো বিষয় নয়। সেই প্রথম সেশন আমাদের ম্যাচটা শেষ করে দিয়েছে। টেস্টে আমাদের প্রতিনিয়তই ধস নামছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। ব্যাটারদের রান করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। এটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। এটাই মোদ্দকথা।’
প্রথম দ্রুত ৬ উইকেট পতনের পর একাই হল ধরেন সাকিব। করেছিলেন ৫১ রান। দ্বিতীয় ইনিংসেও বাংলাদেশের টপ-অর্ডার ব্যর্থ হয়। তবে প্রথম ইনিংসের চেয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছিলো তাদের। ১০৯ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় টাইগাররা। এ করুন অবস্থাতেও ব্যাট হাতে বীরের মত দাঁিড়য়ে যান সাকিব। এবার লড়াই করার জন্য সঙ্গী হিসেবে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসানকে পান। সপ্তম উইকেটে ১২৩ রানের জুটি গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশকে লিড এনে দেন সাকিব-নুরুল। সাকিবের ৬৩ ও নুরুলের ৬৪ রানের কল্যাণে শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪৫ রান তুলে বাংলাদেশ। ফলে ৮৪ রানের টার্গেট দিয়ে আবারও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ।
কঠিন পরিস্থিতিতে নুরুলের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করেছেন সাকিব। নুরুলের কাছ থেকে অন্য ব্যাটারদের শিখতে বললেন তিনি।
সাকিব বলেন, ‘এখান থেকে শেখার অনেক কিছুই আছে। নুরুল চাপে ছিল। সে নিজেকে যেভাবে প্রকাশ করেছে এটা ভালো ব্যাপার। অন্য ব্যাটাররা একই অ্যাপ্রোচ নিতে পারে এবং পরের ম্যাচে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারে।’
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামায় উইকেট থেকে আর্দ্রতা কাজে লাগানোর সুযোগ পাননি বাংলাদেশের বোলাররা। তাই শুরুতে বল করতে না পারাটা বড় প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন সাকিব। তবে এটিকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে চান না তিনি, ‘অবশ্যই টস বড় ভূমিকা রেখেছে। তবে এটি নিয়ে কোন অভিযোগ করতে পারি না। এটা মেনে নিতেই হবে। আমাদের প্রয়োজন ছিল ভালো ব্যাট করা। উইকেট কঠিন ছিল বটে। তবে আমরা যদি আরও বেশি সতর্ক হতাম, ৬ উইকেট না হারিয়ে ২টি হারিয়ে লাঞ্চে যেতাম, তাহলে আদর্শ হতো।’
তবে বোলারদের পারফরমেন্সে খুশি সাকিব। তিনি বলেন, ‘বোলারদের নিয়ে কোন অভিযোগ নেই আমার। সবাই নিজেকে উজাড় করে বোলিং করেছে। প্রতিটি দিনই মাঠে নেমে চেষ্টা করেছে তারা। ব্যাটিংই আমাদের ডুবিয়েছে। তবে আশা করি, পরের ম্যাচে আমরা ঘুরে দাঁড়াবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাটারদের টেকনিক্যালিও অনেক সমস্যা আছে। টেকনিক্যালি সাউন্ড এমন খেলোয়াড় খুব বেশি আছে, আমাদের তা মনে হয় না। আমাদের দলের যারা আছে সবারই টেকনিক্যাল সমস্যা আছে। কিন্তু তাদের উপায় খুঁজে বের করতে হবে- কীভাবে রান করতে হবে, ক্রিজে থাকতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আর এটা ব্যক্তিগতভাবে করা সম্ভভ।’
ব্যাটারদের টেকনিক নিয়ে কতটুকু কাজ করা দরকার, এমন প্রশ্নে সাকিব বলেন, ‘দেখুন! এটাতো আমার জন্য খুব একটা আলোচনার বিষয় না। কোচেরই আলোচনার বিষয়। এখন আমি যদি কোচিংও করাই, অধিনায়কত্বও করি তাহলে তো সমস্যা। আমার মনে হয়, আমার যতটুকু কাজ ততটুকুতে থাকাই ভালো। আমার দায়িত্ব যতটুকু আছে, সেটা পালন করার চেষ্টা করবো। বাকি যাদের যে কাজটা আছে, সেটা করলেই সবার কাজটা সহজ হয়ে যায়।’
ফর্ম ফিরে পেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের আগে অধিনায়কত্ব ছাড়েন মোমিনুল হক। কিন্তু অ্যান্টিগা টেস্টের দুই ইনিংসে যথাক্রমে, ০ ও ৪ রান করেন তিনি। গত নয় ইনিংসে ডাবল-ফিগারে পৌঁছাতে পারেননি মোমিনুল। এ অবস্থায় কি মোমিনুলের বিরতির দরকার কি-না, এমন প্রশ্নে মোমিনুল বলেন, ‘এটা আমার পক্ষে বলা মুশফিক, তবে যা হচ্ছে অবশ্যই আমার তো মোমিনুলের সাথে কথা হয়, আবারও কথা হবে, ও যদি মনে করে যে, তার ব্রেক দরকার আছে সেটা হতে পারে। কিন্তু এখন আমরা আসলে এই মুহূর্তে একটা ম্যাচ শেষ হওয়ার পর কোন সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বা কোন কিছু চিন্তা করাটা খুব একটা ভালো কিছু না।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরের দুই তিন দিন বিশ্রাম আছে। এরপর যখন সেন্ট লুসিয়া অনুশীলন করবো, হয়তো সেদিন আমরা চিন্তা করবো। যে আসলে আমাদের দলের জন্য কোনটা হলে, ভালো হতে পারে। খুব যে বেশি পরিবর্তন করলে খুব বেশি যে ভালো কিছূ হবে, সেটার নিশ্চয়তাও আপনি দিতে পারবেন না।’
আগামী ২৪ জুন থেকে সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন স্যামি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।